ইশরাকের মেয়র হওয়া অনিশ্চিত: মেয়াদ শেষ, শপথ নিয়ে আইনি জটিলতা

বিস্তারিত প্রতিবেদন:

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দ্বিতীয় পর্ষদের মেয়াদ আজই শেষ হচ্ছে। এর মধ্যেই নতুন করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।

সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়রের কার্যকাল শুরু হয় প্রথম সাধারণ সভা থেকে এবং পাঁচ বছর পর তা শেষ হয়। এ অবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ একটি করপোরেশনে নতুন মেয়রের শপথ আইনি দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও নগর পরিকল্পনাবিদরা।

⚖️ বিশ্লেষকদের মত: শপথ আর সম্ভব নয়

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলিম বলেন,

“নিয়ম অনুযায়ী করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের আর শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই। সব মিলিয়ে এটি একটি ‘লেজেগোবরে’ অবস্থা।”

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন,

“করপোরেশনের মেয়াদ শেষ মানে প্রশাসনিকভাবে পর্ষদ বিলুপ্ত। এই পরিপ্রেক্ষিতে কোনো নির্বাচিত ব্যক্তির শপথ নেওয়া অযৌক্তিক।”

🧑‍⚖️ আইনজীবীর ভিন্ন ব্যাখ্যা: ‘বিশেষ পরিস্থিতি’তে সুযোগ আছে

ইশরাক হোসেনের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন অবশ্য ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন,

“স্থানীয় সরকার আইনে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ নামে একটি ধারা রয়েছে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত শূন্য পদে দায়িত্ব পালনে বাধা নেই।”

তিনি আরও দাবি করেন,

“ইসি চাইলে সেই বিশেষ বিধান অনুযায়ী ইশরাককে শপথের সুযোগ দিতে পারে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা নেই।”

🏛️ আইনি কাঠামো কী বলছে?

• ৪৯(১) ধারা: মেয়র-কাউন্সিলরদের মেয়াদ পাঁচ বছর, প্রথম সাধারণ সভার দিন থেকে গণনা।

• ১৬ ধারা: পদ শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন; নতুন ব্যক্তি মেয়াদের বাকি সময় দায়িত্ব পালন করবেন।

• ২৫(১) ধারা: বিশেষ অবস্থায় প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে—যিনি সরকারি কর্মকর্তা বা উপযুক্ত ব্যক্তি হতে পারেন।

এই আইনি কাঠামোর আলোকে বিশ্লেষকরা বলছেন, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ইশরাকের শপথ নেওয়ার অধিকার আর বলবৎ নেই। প্রশাসক নিয়োগের পথ এখন খোলা।

🏛️ ইসির অবস্থান: এখনো আদালতের পর্যবেক্ষণ আসেনি

ইশরাককে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের অনুলিপি নির্বাচন কমিশনে পৌঁছায়নি। ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন,

“আমরা এখনো আদালতের পর্যবেক্ষণ পাইনি। সেটি এলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”

⚠️ উপসংহার: রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা

ডিএসসিসিতে ইশরাক হোসেন মেয়র পদে বসতে পারবেন কিনা, তা এখন নির্ভর করছে একদিকে আইনগত ব্যাখ্যার ওপর, অন্যদিকে ইসির সিদ্ধান্ত ও আদালতের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণের ওপর। এর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রশাসক নিয়োগ অথবা উপনির্বাচনের আয়োজন এখন সময়ের দাবি।

ট্যাগস:

#ইশরাক_হোসেন #ডিএসসিসি #মেয়র_শপথ #বিএনপি #স্থানীয়_সরকার #আইনি_সংকট #নির্বাচন_কমিশন