দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবার, বিদেশে স্থায়ী সেনা মোতায়েন করল জার্মানি — লিথুয়ানিয়ায় ৫,০০০ সেনার সাঁজোয়া ব্রিগেড

নতুন স্থাপিত ৪৫তম সাঁজোয়া ব্রিগেডে থাকবে প্রায় ৪,৮০০ জার্মান সেনা এবং ২০০ বেসামরিক সদস্য। এই ব্রিগেড ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করবে।

জার্মানির ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত: যুদ্ধোত্তর নীতির ছায়া থেকে বেরিয়ে আসা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তি ও নিজস্ব সাংবিধানিক নীতির কারণে বৈদেশিক সামরিক উপস্থিতি বিষয়ে বরাবরই সংযত ছিল। কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ও ইউরোপে নিরাপত্তা হুমকি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বার্লিন এখন আগ্রাসন মোকাবিলায় আরও সক্রিয়।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ বলেন:

“বাল্টিক অঞ্চলের মিত্রদের নিরাপত্তা মানেই আমাদের নিরাপত্তা। এটি শুধু প্রতীকী পদক্ষেপ নয়, বরং ইউরোপের প্রতিরক্ষা কাঠামো পুনর্গঠনের সূচনা।”

🛡️ নতুন সাঁজোয়া ব্রিগেড: কৌশলগত অবস্থান ও গুরুত্ব

• অবস্থান: লিথুয়ানিয়া — রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ ও বেলারুশ সীমান্তঘেঁষা অঞ্চল

• সংখ্যা: মোট ৫,০০০ সদস্য (৪,৮০০ সেনা + ২০০ বেসামরিক)

• সম্পূর্ণ কার্যকারিতা: ২০২৭ সালের মধ্যে

• প্রথম মোতায়েন: ২০১৭ সালে সীমিত সেনা পাঠানো হয়, এখন তা পূর্ণাঙ্গ ব্রিগেডে উন্নীত

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসের ক্যাথেড্রাল স্কোয়ারে সামরিক হেলিকপ্টার প্রদর্শনের মাধ্যমে এই মোতায়েনের তাৎপর্য উদ্‌যাপন করা হয়।

💰 রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া: প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ব্যাপক বৃদ্ধি

• জার্মানি:

  • ২% জিডিপি প্রতিরক্ষা ব্যয়ে বরাদ্দের লক্ষ্য

  • বিশেষ তহবিল: $১১৩ বিলিয়ন (প্রতিরক্ষা সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য)

• লিথুয়ানিয়া:

  • ২০২৬ সাল থেকে প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ৫–৬% করার ঘোষণা

জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বোরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন:

“জার্মানি কেবল প্রতিক্রিয়াশীল নয়, আমরা এখন ন্যাটোর প্রতিরক্ষায় সক্রিয় ও নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা নিচ্ছি।”

🗨️ লিথুয়ানিয়ার প্রতিক্রিয়া: ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও আস্থা

লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাউসেদা বলেন:

“এই দিনটি আমাদের ইতিহাসে স্মরণীয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম জার্মান সেনাবাহিনী দীর্ঘমেয়াদে অন্য দেশে স্থায়ীভাবে মোতায়েন হলো। এটি শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিক আস্থারও বহিঃপ্রকাশ।”

🔍 বিশ্লেষণ: ইউরোপে প্রতিরক্ষা পুনর্গঠন ও জার্মানির ভূমিকায় পরিবর্তন

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মোতায়েন:

• জার্মানির আত্মনিয়ন্ত্রণ নীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন

• ন্যাটোর পূর্ব সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন প্রতিরক্ষা বলয়

• রাশিয়াকে কৌশলগত বার্তা: ইউরোপ এখন প্রস্তুত

📌 উপসংহার

এমন এক সময়ে যখন ইউরোপ যুদ্ধ ও অস্থিরতার প্রান্তে দাঁড়িয়ে, জার্মানির এই সাহসী সিদ্ধান্ত শুধু সামরিক কৌশল নয়, বরং একটি নতুন ভূরাজনৈতিক মানচিত্রের সূচনা। দীর্ঘ সময় ধরে ‘নমনীয় ইউরোপ’ নাম ধারণ করা দেশ এখন ‘নেতৃত্বদানকারী ইউরোপ’-এ রূপ নিচ্ছে।