ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১৯ এএম
আপডেট: বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১৯ এএম
আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ঘোষণা দেন। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচারিত হয়।
ড. ইউনূস বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।”
এ সময় তিনি নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর এবং সর্বজনগ্রাহ্য করার আহ্বান জানান। বলেন, “ভোট যেন হয় ঈদের উৎসবের মতো। আমরা যেন আনন্দের সঙ্গে, নাগরিক দায়িত্ব পালনে গর্ব করে কেন্দ্রে যাই।”
🔹 জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ও স্মরণ
ভাষণের শুরুতে তিনি ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং সেই আন্দোলনে শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। একইসঙ্গে আহত, পঙ্গু, দৃষ্টিশক্তি হারানো সংগ্রামীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
ড. ইউনূস বলেন, “৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে। আজ আমরা নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের পথে।”
🔹 ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত পর্যায়ে
প্রধান উপদেষ্টা জানিয়ে দেন যে, ‘জুলাই সনদ’ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ঐ সনদের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ রাষ্ট্র সংস্কারে একমত হয়েছে। সনদে রয়েছে জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সুশাসন ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার রূপরেখা।
🔹 নির্বাচনের প্রস্তুতি ও জনগণের অংশগ্রহণের আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আরও একটি গণঅভ্যুত্থান যেন প্রয়োজন না হয়, সে জন্য এই নির্বাচন হবে ঐতিহাসিক। সবাই যেন ভোট দিতে পারেন, কেউ বাদ না পড়েন।”
তিনি পরিবারসহ সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা আমাদের বকেয়া আনন্দ এবার মহাআনন্দে পরিশোধ করব।”
🔹 আইনশৃঙ্খলা ও পুলিশ সংস্কার
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার প্রসঙ্গে ড. ইউনূস জানান, পুলিশ যেন আন্দোলন দমনে আর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জিপিএস ট্র্যাকিং, বডি ক্যামেরা, স্বচ্ছ জিজ্ঞাসাবাদ ঘরসহ ৬০টির বেশি সংস্কার বাস্তবায়নাধীন।
🔹 বিচার ও মানবাধিকার
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ হবে স্বচ্ছ কাচের ঘরে, হাজতখানায় মানবিক সেবা নিশ্চিত করা হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় মানবাধিকার সেল চালু করা হয়েছে, যেখানে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ করতে পারবেন।
🔹 সাংবাদিকদের জন্য স্বস্তির বার্তা
সাইবার নিরাপত্তা আইন সংস্কার করে ৯টি নিবর্তনমূলক ধারা বাতিল করা হয়েছে। সাংবাদিকদের আইনি হয়রানি বন্ধে এবং ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নতুন অধ্যাদেশ আনা হয়েছে।
🔹 রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান
ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান যে, তরুণ ও নারী ভোটারদের যেন ইশতেহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়। “যারা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে, তারা বিশ্বকেও বদলে দিতে পারে।”
🔹 নির্বাচন যেন সংঘাতমুক্ত হয়
তিনি বলেন, “একটি গোষ্ঠী নির্বাচন ব্যাহত করতে তৎপর। কিন্তু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে অপশক্তির পরাজয় হবে।”