এপ্রিলের পর আর সময় নয়: রাজনৈতিক নেতাদের আশ্বস্ত করলেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বাড়বে না এবং নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান না—এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “এপ্রিলের পর আর কোনোভাবেই সময় গড়াবে না।” গতকাল রোববার (২৫ মে) রাজধানীর হেয়ার রোডে সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একাধিক দফায় বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। রোববার বিকেলে দুই দফায় আরও কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ড. ইউনূস।

বৈঠকে অংশ নেয়া দল ও নেতারা

প্রথম পর্বে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এবি পার্টি, সিপিবি, বাসদ, জাতীয় গণফ্রন্ট, ভাসানী জনশক্তি পার্টি এবং জেএসডির নেতারা বৈঠকে অংশ নেন।

দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে অংশ নেন হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট এবং গণঅধিকার পরিষদের প্রতিনিধিরা।

'আমি থাকতে চাই না' — সোজাসাপ্টা বার্তা ড. ইউনূসের

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন, “আমি ক্ষমতায় থাকতে চাই না। আমি চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে যেতে। ২০২৬ সালের জুনের ৩১ তারিখের পর আমরা থাকব না—এটি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি পূর্ণ হলে তবেই সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে।

নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে উদ্বেগ, আহ্বান ও প্রতিশ্রুতি

নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন, সময় আর বাড়বে না। আমাদের পরামর্শ—রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে মতবিনিময় করুন।”

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “সংস্কার কাজে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে, সেটি বাস্তবায়নযোগ্য হবে না।”

ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি রেজাউল করীম বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা তাকে বলেছি, আপনি মাঝপথে চলে গেলে আমরা সবাই পরাজিত হবো।”

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “সরকারের ওপর এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট মাস উল্লেখ করে ঘোষণা দেওয়া জরুরি।”

গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানানো হলে দলগুলো প্রস্তুতি নিতে পারবে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগের প্রতিবন্ধক।”

গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর বলেন, “দায়িত্বে থাকা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি। সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব কমাতে প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি ভূমিকা দরকার।”

খেলাফত মজলিসের ৮ দফা প্রস্তাব

বৈঠকে খেলাফত মজলিস প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৮টি সুপারিশ তুলে ধরে, যার মধ্যে রয়েছে:

1. সর্বদলীয় জাতীয় কনভেনশন ডাকা

2. সংস্কারের স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা

3. নির্বাচন নিয়ে নির্দিষ্ট রোডম্যাপ

4. ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচার

5. সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষা

6. নিয়মিত রাজনৈতিক সংলাপ

7. করিডোর বিষয়ে হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়া

8. কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন বাস্তবায়ন না করা

‘উনি হাল ছাড়বেন না’ — রাজনৈতিক ঐকমত্য

বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই একমত হয়েছেন—ড. ইউনূস যেন মাঝপথে হাল না ছাড়েন। তারা বলেছেন, “যেহেতু জনগণ তাকে ভরসা দিয়েছে, সেহেতু তিনিই জাতিকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে নিতে পারবেন।”

🔗 আপডেট: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, রাজনৈতিক সংলাপ অব্যাহত থাকবে এবং আগামী মাসেই নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে একটি খসড়া প্রকাশ করা হতে পারে।