আজহারের ফাঁসি ছিল 'বিচারের নামে অবিচার': আপিল বিভাগের রায়ে অভূতপূর্ব পর্যবেক্ষণ

এ রায়ের পর্যবেক্ষণে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, আজহারের ফাঁসির রায় ছিল 'পৃথিবীর ইতিহাসে বিচারের নামে অবিচার'।

মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় দেন। বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন: বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি ইমদাদুল হক, বিচারপতি মো. আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

চারটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ

রায়ে আদালত চারটি মূল পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে জানায়:

1. ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের ভুল পরিবর্তন: ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, তা ছিল একটি 'বড় ভুল'।

2. সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই রায়: উপস্থাপিত প্রমাণ সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করেই আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

3. আগের আপিল বিভাগ ব্যর্থ: আদালত মনে করেন, আগের আপিল বিভাগ মামলার তথ্য যথাযথভাবে বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

4. বিচারের নামে অবিচার: আদালতের ভাষায়, “এটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিচারের নামে অবিচার হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।”

আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া: 'ন্যায়বিচারের বিজয়'

আদালত চত্বরে আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, “এই রায় শুধুই বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসেও একটি নজির। সত্যের জয় হয়েছে, মিথ্যার পরাজয় ঘটেছে।”

তিনি আরও বলেন, “পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সরকার একটি রিভিউ বোর্ড গঠন করে অতীতের মানবতাবিরোধী মামলাগুলোর রায় পুনর্বিবেচনা করতে পারে। যেন যাদের বিরুদ্ধে অবিচার হয়েছে, তারা ও তাদের পরিবার ন্যায়বিচার পেতে পারে।”

রায়ের পর মুক্তিতে বাধা নেই

রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়েছে। ফলে জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে আর কোনো আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

কে কার পক্ষে ছিলেন আদালতে?

আজহারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক এবং প্রসিকিউশনের পক্ষে গাজী এম এইচ তামিম।

জামায়াত নেতাদের উপস্থিতি

রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়েরসহ দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।